ছেলে হারিয়েছেন চাকরি, মা নেমেছেন ভিক্ষায়

চট্টগ্রাম নগরের সল্টঘোলা ক্রসিং মোড়ে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছেন সফিয়া বেগম। তিনি জানান, ভিক্ষা তার পেশা নয়। মহিউদ্দিন নামে তার একটা ছেলে আছে। ঢাকায় একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন। সেখানে পাওয়া সামান্য বেতনে চট্টগ্রাম নগরের একটি বস্তিতে তাদের সংসার চলত।

কিন্তু লকডাউনে রেস্তোরাঁটি বন্ধ। সেই সঙ্গে মহিউদ্দিনও দুই মাস ধরে বেকার। বছরখানেক আগে বিয়ে করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে তিনজনের সংসারে চুলার আগুন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। একবেলা খেলে দুবেলা উপোষ থাকতে হচ্ছে। উপয়ান্তর না দেখে সফিয়া বেগম নেমেছেন ভিক্ষায়।

তিনি  বলেন, ‘কি করব বাবাজি। ছেলে তো আর ভিক্ষা করতে পারছে না। তাই আমি মুখ বন্ধ করে ভিক্ষায় নামছি। গতকাল সাহরিতে এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) চালের ভাত তিনজনে মিলে খেয়েছি। ঘরে এখন কিছুই নাই। ইফতার কি দিয়া করব সেটাও জানি না। এখানে অল্প টাকা পেলে ইফতারের এবং সাহরির জন্য কিছু নিয়ে যেতে পারব।’

শুধু সফিয়া বেগম না। তার মতো আরও অনেকে এমন আছেন। শনিবার (১ মে) চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট, জিইসি, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, গোলপাহাড়সহ একাধিক মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভিক্ষুকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।

এই মানুষগুলো বলেন, লকডাউনের পর আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে ভিক্ষুকের সংখ্যা। বেশিরভাগই পেশাদার ভিক্ষুক নয়। অভাব এবং ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছেন। নতুন করে ভিক্ষায় নামাদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি।

একদিকে ভিক্ষুক বেড়েছে, অন্যদিকে করোনায় মানুষ আগের মতো ভিক্ষা দিচ্ছে না। আবার দোকানপাটে বেচাকেনা না থাকায় তারাও ভিক্ষা দিচ্ছে না। তারপরও কিছুই করার নেই তাদের। যা পান তা দিয়ে যদি একমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করা যায়। এই আশায় রাস্তায় নামেন।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশন চত্বরে আরেক নারী ভিক্ষুক বলেন, লকডাউন এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে মরে যেতে হবে। আমি নিয়মিত ভিক্ষা করি না। আমার দুই ছেলে চাকরি করত। কিন্তু লকডাউনে তারা বেকার হয়ে পড়েছে। শুনেছি বড় ছেলে যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত সেটি একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এই লকডাউন আমাদের সবশেষ করে দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *