‘প্রেমের টানে ঠাকুরগাঁওয়ের অজপাড়াগাঁয়ে ইতালির যুবক’

‘ইতালিয়ান নাগরিক আলী সান্দ্র্রে চিয়ারোমিন্ডে সনাতন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী রত্না রানী দাসকে বিয়ে করেছেন প্রে’ম মানে না দেশ কালের সীমানা। যুগে যুগে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে যেন প্রে’মের টানে ভিনদেশ থেকে বাংলাদেশে আসার সংখ্যা একটু বেড়েই গেছে।

 

 

সেই দলে এবার যুক্ত হলেন ইতালিয়ান নাগরিক আলী সান্দ্র্রে চিয়ারোমিন্ডে। তিনি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার অজপাড়াগাঁ চাড়োলের খোকোবাড়ি গ্রামের রত্না রানী দাসের প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন। সোমবার (২৫ জুলাই) রাতে সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

 

বিষয়টি ঢাকা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন চাড়োল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার রায়। রত্নার বাবা মারকুস দাস বলেন, “আমার এক ভাই ইতালি থাকেন।

 

তার মাধ্যমেই জামাইয়ের সঙ্গে আমার মেয়ের পরিচয় হয়। তারপর মোবাইল ফোনে তাদের কথাবার্তা হয়। জামাই সোমবার দুপুর ১টায় বাংলাদেশে আসার পর আমাদের বাড়িতে আসে। ধর্মীয় সব রীতি মেনে ধুমধাম করে তাদের বিয়ে দিয়েছি।” রত্নার মা জানগি দাস বলেন, “আমার দেবর তার পরিবার নিয়ে ইতালি থাকে।

 

সেখান থেকে সে আমাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। প্রস্তাবের পর আমার মেয়ে বিয়েতে সম্মতি দেয়। পরে আমরা আয়োজন করে বিয়ে সম্পন্ন করেছি। আমার জামাই মেয়েকে ইতালি নিয়ে যাবে।

 

পরে আমরাও যাবো।” বিয়ের কনে রত্না রানী দাস বলেন, “সান্দ্র্রের সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে আমার চাচা মা-বাবাকে প্রস্তাব দেন। পরে মা-বাবা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমিও কথা বলি।

 

একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। চাচা আমাকে অল্পবিস্তর ইতালিয়ান ভাষা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। সেগুলো দিয়ে আমি সান্দ্র্রের সঙ্গে কথা বলি।

 

তারপর সোমবার আমাদের বিয়ে হয়।” ইতালীয় স্বামীকে নিয়ে রত্না বলেন, “সান্দ্রে অনেক ভালো মনের মানুষ। সে সবকিছু মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। সেও আমাদের বাংলা ভাষা শেখার চেষ্টা করছে।”

 

বিয়ে নিয়ে আলী সান্দ্র্রে চিয়ারোমিন্ডে বলেন, “ইতালিতে রত্নার চাচার সঙ্গে আমি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সেখানে দেখেছি, তার দাম্পত্য-জীবন অনেক সুন্দর। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে আমি রত্নার চাচাকে বাংলাদেশে বিয়ে করার ইচ্ছার কথা জানাই। তিনি রত্নার বিষয়ে আমাকে প্র্রস্তাব দেন।

 

আমারও তাকে অনেক পছন্দ হয়।” নিজের স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন নিয়ে তিনি বলেন, “রত্না ও তার পরিবার অনেক ভালো। তারা অনেক আন্তরিক ও ভালো মনের মানুষ। আমি রত্নাকে ইতালি নিয়ে যাব। পাসপোর্ট ও ভিসা-সংক্রান্ত সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি আমরা চলে যাবো।”

 

ইতালীয় পাত্রকে দেখতে আসা প্রতিবেশী চম্পা খাতুন বলেন, “এর আগে নিজ দেশের ছেলে ও মেয়ের বিয়ে দেখতাম। এবার ব্যতিক্রমী একটি বিয়ে দেখলাম।

 

আমাদের প্রচলিত দেশের ছেলের পরিবর্তে ভিনদেশি পাত্র।” গ্রামের আরেক বাসিন্দা সুদেব ঘোষ বলেন, “বিয়েতে অনেক আনন্দ করেছি। ইতালির যুবক আমাদের গ্রামে এসে বিয়ে করলেন।

 

এটি অনেক বড় আনন্দের বিষয়। অন্যান্য বিয়ের চেয়ে এই বিয়েটি একটু ব্যতিক্রম। বিদেশ থেকে কেউ এসে বিয়ের ঘটনা গ্রামে এই প্রথম।”

 

চাড়োল ইউপি চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার রায় বলেন, “সাড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই আলী সান্দ্র্রে চিয়ারোমিন্ডে ও রত্না রানী দাসের বিয়ে হয়েছে।

 

সোমবার বিয়ের মাধ্যমে তাদের প্রণয়ের সফল পরিণতি ঘটে। আমি নিজেও বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমি তাদের আশীর্বাদ এবং মঙ্গল কামনা করি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *